শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৮:২৭ অপরাহ্ন

১৩০ টাকা হাজিরার কর্মচারী নুরুল যেভাবে ৪৬০ কোটি টাকার মালিক

১৩০ টাকা হাজিরার কর্মচারী নুরুল যেভাবে ৪৬০ কোটি টাকার মালিক

স্বদেশ ডেস্ক;

দালালির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া টেকনাফ বন্দরের সাবেক চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলামকে (৪১) রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় জাল টাকা, বিদেশী মুদ্রা ও মাদক উদ্ধার করা হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজার বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে গতকাল সোমবার মধ্যরাতে ঢাকা মহানগরীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে দালালির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া টেকনাফ বন্দরের সাবেক চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর মো. নুরুল ইসলামকে (৪১) গ্রেপ্তার করা হয়। এই অভিযানে উদ্ধার করা হয় জাল নোট ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০, মিয়ানমার মুদ্রা ৩ লাখ ৮০ হাজার, ইয়াবা ট্যাবলেট ৪ হাজার ৪০০ পিস এবং নগদ ২ লাখ ১ হাজার ১৬০ টাকা।

নুরুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, সে ২০০১ সালে টেকনাফ স্থলবন্দরে চুক্তিভিত্তিক দৈনিক ১৩০ টাকা হারে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি নেয়। বন্দরে কর্মরত থাকাকালীন তার অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে সে চোরাকারবারী, শুল্ক ফাঁকি, অবৈধ পণ্য খালাস, দালালি ইত্যাদির কৌশল রপ্ত করে। অতঃপর তার অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে সে বন্দরে বিভিন্ন রকম দালালির সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়। একপর্যায়ে একটি দালালি সিন্ডিকেট তৈরি করে।

২০০৯ সালে সে চাকরি ছেড়ে দেয়। তারই আস্থাভাজন একজনকে উক্ত কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করে। কিন্তু সে দালালি সিন্ডিকেটটির নিয়ন্ত্রণ রেখে দেয়। এভাবে সে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

র‍্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত নুরুল টেকনাফ বন্দর কেন্দ্রীক দালালি সিন্ডিকেটের অন্যতম মূলহোতা। তার সিন্ডিকেটের ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে। যারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে দালালি কার্যক্রমগুলো করে থাকে। এই সিন্ডিকেটটি পণ্য খালাস, পরিবহন সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পথিমধ্যে অবৈধ মালামাল খালাসে সক্রিয় ছিল। সিন্ডিকেটের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী দেশ হতে কাঠ, শুটকি মাছ, বরই আচার, মাছ ইত্যাদির আড়ালে অবৈধ পণ্য নিয়ে আসা হতো।

চক্রটির সদস্যরা টেকনাফ বন্দর, ট্রাক স্ট্যান্ড, বন্দর লেবার ও জাহাজের আগমন-বর্হিগমন নিয়ন্ত্রণ করতো। গ্রেপ্তারকৃতের সঙ্গে চিহ্নিত মাদককারবারীদের যোগসাজশ ছিল বলে সে জানায়। এ ছাড়া সে অন্যান্য অবৈধ পণ্যের কারবারের জন্য হুন্ডি সিন্ডিকেটের সঙ্গে সমন্বয় এবং চতুরতার সঙ্গে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েজ কারসাজি করতো। অবৈধ আয়ের উৎসকে ধামাচাপা দিতে সে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে; তন্মধ্যে, এমএস আল নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, এমএস মিফতাউল এন্টারপ্রাইজ, এমএস আলকা এন্টারপ্রাইজ, আলকা রিয়েল স্টেট লিমিটেড এবং এমএস কানিজ এন্টারপ্রাইজ অন্যতম।

নুরুলের সম্পদের বিবরণ দিয়ে র‍্যাব আরও জানায়, ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে তার ছয়টি বাড়ি ও ১৩টি প্লট ক্রয় করেছে। এ ছাড়াও সাভার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, ভোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে/বেনামে সর্বমোট ৩৭টি জায়গা/প্লট/বাগানবাড়ি/বাড়ি রয়েছে। তার অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের আনুমানিক মূল্য ৪৬০ কোটি টাকা। তার নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ১৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। বর্তমানে সে জাহাজ শিল্প ও ঢাকার নিকটে বিনোদন পার্কে বিনিয়োগ করছে বলেও জানিয়েছে র‍্যাব।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877